#Quote
More Quotes by Bibhutibhushan Bandyopadhyay
এক আলাদা জীবন, যারা ঘরের দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকিতে ভালোবাসে না, সংসার করা যাদের রক্তে নাই, সেই সব বার মুখো, খাপছাড়া প্রকৃতির মানুষের পক্ষে এমন জীবনই তো কাম্য।
দুঃখকে বাদ দিয়ে জগতে সুখ নেই, প্রকৃত সুখের অবস্থা গভীর দুঃখের পরে, দুঃখের পূর্বের সুখ অগভীর, তরল, খেলো হয়ে পড়ে। দুঃখের পরে যে সুখ - তার নির্মল ধারায় আত্মার স্নানযাত্রা নিষ্পন্ন হয়, জীবনের প্রকৃত আস্বাদ মিলিয়ে দেয়। জীবনকে যারা দুঃখময় বলেছে, তারা জীবনের কিছুই জানেনা, জগৎটাকে দুঃখের মনে করা নাস্তিকতা। জগত হলো সেই আনন্দময়ের বিলাস-বিভূতি। তবে দেখার মত মন ও চোখ দরকার।
জীবনে মানুষ ততক্ষণ ঠিক শেখে না অনেক জিনিসই, যতক্ষণ সে দুঃখের সম্মুখীন না হয়।
পরের বাড়ি যেতে হবে যে। না হয় আর এক বছর। তারা খাঁটিয়ে নেবে তবে খেতে দেবে। বসে খেতে দেবে না। চকি ঘুম এলি তারা শোনবে না।
প্রকৃতপক্ষে ঠিক মনের মতো লোক পাওয়া বড় দুষ্কর। অনেক কষ্টে একজন হয়তো মেলে। অধিকাংশ লোকের সঙ্গে যে আমাদের আলাপ হয়, সে সম্পূর্ন মৌখিক। তাদের সঙ্গে আমাদের হয়তো ব্যক্তিগত অভ্যাসে, চরিত্রে, মতে, ধর্ম বিশ্বাসে বিদ্যায় যথেষ্ট তফাৎ। কিন্তু একই অফিসে কি কলেজে কি কোর্টে একসঙ্গে কাজ করতে হয়, দুবেলা দেখা হয় দাদা কিংবা মামা বলে সম্বোধন করতে হয়, কৌটাস্থ পানের খিলির বিনিময়ও হয়ত হয়ে থাকে- কিন্তু ওই পর্যন্ত। মন সায় দিয়ে বলে না তার সঙ্গে দুবেলা দেখা হলে গল্প করে বাঁচি। কোন নিরালা বাদলের দিনে অফিসের হরিপদ-দার সঙ্গ খুব কাম্য বলে মনে হবে না।
করুণা ভালবাসার সবচেয়ে মূল্যবান মসলা, তার গাঁথুনি বড় পাকা হয়।
বুঝি না কেন এক-এক জাতির মধ্যে সভ্যতার কী বীজ লুক্কায়িত থাকে, তাহারা যত দিন যায় তত উন্নতি করে আবার অন্য জাতি হাজার বছর ধরিয়াও সেই একস্থানে স্থাণুবৎ নিশ্চল হইয়া থাকে? বর্বর আর্যজাতি চার-পাঁচ হাজার বছরের মধ্যে বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, কাব্য, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যামিতি, চরক-সুশ্রুত লিখিল, দেশ জয় করিল, সাম্রাজ্য পত্তন করিল, ভেনাস দ্য মিলোর মূর্তি, পার্থেনন, তাজমহল, কোলোঁ ক্যাথিড্রাল গড়িল, দরবারি কানাড়া ও ফিফথ সিম্ফোনির সৃষ্টি করিল এরোপ্লেন, জাহাজ, রেলগাড়ি, বেতার, বিদ্যুৎ আবিষ্কার করিল অথচ পাপুয়া, নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীরা, আমাদের দেশের ওই মুণ্ডা, কোল, নাগা, কুকিগণ যেখানে সেখানেই কেন রহিয়াছে এই পাঁচ হাজার বছর?
মানুষ কি চায় উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ভোঁতা এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না, জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন। মন শান-বাঁধানো রস ঢুকিতে পায় না।
যে জাতির মধ্যে সৌন্দর্য বোধ দিন দিন এত কমে যাচ্ছে, সে জাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে খুব সন্দেহ হয়।
কিন্তু মানুষের জীবনে এমন সব অদ্ভুদ ঘটনা ঘটে তা উপন্যাসে ঘটাতে গেলে পাঠকরা বিশ্বাস করতে চাইবে না, হেসেই উড়িয়ে দেবে।